বঙ্গদেশে মানুষের বিচরণ ও বসবাস শুরু হয়েছে কয়েক হাজার বছর আগে থেকে। এই মানুষজনের বসতি তথা অর্থনৈতিক জীবন বিবর্তিত হয়েছে তার চারপাশের ভৌগলিক পরিবেশ এবং বিভিন্ন সময়ে বঙ্গভূমিতে আগত অভিবাসী মানুষের প্রভাবে। বহু বছর ধরে ঘটে চলা এই বিবর্তনের একটি রূপরেখা তুলে ধরাই এই বইটির মূল উদ্দেশ্য।
যেকোনো যুগে বসতি ও...
আরো পড়ুন
বঙ্গদেশে মানুষের বিচরণ ও বসবাস শুরু হয়েছে কয়েক হাজার বছর আগে থেকে। এই মানুষজনের বসতি তথা অর্থনৈতিক জীবন বিবর্তিত হয়েছে তার চারপাশের ভৌগলিক পরিবেশ এবং বিভিন্ন সময়ে বঙ্গভূমিতে আগত অভিবাসী মানুষের প্রভাবে। বহু বছর ধরে ঘটে চলা এই বিবর্তনের একটি রূপরেখা তুলে ধরাই এই বইটির মূল উদ্দেশ্য।
যেকোনো যুগে বসতি ও তার অর্থনীতি নির্ভর করে থাকে সে যুগের মানুষের আয়ত্তাধীন প্রযুক্তি বিজ্ঞানের উপর। এই উপলব্ধি থেকেই একজন প্রযুক্তিবিদ হিসাবে কৌশিক দত্ত রায় বঙ্গের মানুষের বসতির বিবর্তনকে চর্চা করেছেন। প্রস্তরযুগে উৎপাদনের হাতিয়ার ছিল পাথরখন্ড, সেই অনুসারে বাংলায় তার বসতি সীমাবদ্ধ ছিল শুধুমাত্র সেই অঞ্চলটুকুতেই যেখানে পাথর সহজলভ্য। কৃষিকাজ ও লোহার ব্যবহার শেখার পর বসতি প্রসারিত হয়েছে বাংলা বিভিন্ন নদী উপত্যকার মধ্যে। মানুষের সম্ভব হয়েছে উদ্বৃত্ত ফলানো, যার মাধ্যমে বেশ কিছু মানুষ মুক্ত হয়েছে চাষবাস থেকে। বাংলায় তৈরি হয়েছে নগর, যাদের খাদ্য যোগান দিয়েছে গ্রাম। বঙ্গদেশে অতিপ্রাচীনকাল থেকে অভিবাসী হয়েছেন নানা জায়গার মানুষ। এই অভিবাসী মানুষেরা সঙ্গে নিয়ে এসেছেন তাদের জানা প্রযুক্তি ও জীবন যাত্রার নানা কলা কৌশল ও সংস্কৃতিকে। এদেশের মানুষ সেটি খুব সহজেই গ্রহণ করেছে, আত্মস্থ করেছে ও তার সাথে উন্নত হয়েছে বাংলার প্রযুক্তি ও সংস্কৃতি। অস্ট্রিকরা এদেশে চাষবাস শুরু করে, দ্রাবিড়রা তাকে আরো উন্নত করে, আর্য জাতির মানুষেরা বাংলার সংস্কৃতিতে প্রভাব ফেলে এবং আগেকার কৌম সমাজ ভেঙে বড় রাষ্ট্র গড়ে। মধ্যযুগে বঙ্গভূমিতে ইসলাম নিয়ে আসে নতুন প্রযুক্তি, বিজ্ঞান এবং বাংলা ভাষার চর্চা শুরু হয়। এযুগেই বাংলা প্রথম পরিচিত হল এই উপমহাদেশের বাইরের বিশ্বের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাথে। পরবর্তীকালে ব্রিটিশ রাজত্ব উপমহাদেশে শুরু হয় বাংলা থেকেই— তাই উপমহাদেশে পাশ্চাত্যের আধুনিক চিন্তার সাথে প্রথম পরিচয় বাংলারই। ১৯৪৭-এর পরে বাংলা দ্বিখণ্ডিত হলে দু'টি আলাদা রাষ্ট্রের মধ্যে দুই বাংলার পরবর্তী ইতিহাস রচিত হয়।
এই সমস্ত সময়কালের বাংলার বসতিকে কেন্দ্র করে প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিবর্তনের গতি ও ছন্দকে কয়েকটি আলাদা যুগে ভাগ করে এই বইটিতে আলোচনা করা হয়েছে। এই বিষয়ে প্রতিটি সংশ্লিষ্ট তথ্যের সূত্র উল্লেখিত হয়েছে— যেটি ভবিষ্যতের গবেষকদের সহায়তা করবে।
কম দেখান