উনিশ শতকে আর্থ-সামাজিক-রাজনীতিক প্রেক্ষাপটে জাতিগত স্বাতন্ত্র্যচিন্তার সূত্র ধরে বাঙালি সমাজে সম্প্রদায়গত বিভেদ, জাতিবৈর মনোভাব ও ধর্মবিদ্বেষ বিশেষ প্রশ্রয় লাভ করে। ফলে প্রধান দুটি সম্প্রদায় হিন্দু ও মুসলমানের সামাজিক সৌহার্দ বিনষ্ট ও মানসিক দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। এই দুই সম্প্রদায়ের পারস্পরিক জানা-বোঝার তেমন কোনো সুযোগ ছিল না। কিছু পরিমাণে সে ব্যবস্থা হতে...
আরো পড়ুন
উনিশ শতকে আর্থ-সামাজিক-রাজনীতিক প্রেক্ষাপটে জাতিগত স্বাতন্ত্র্যচিন্তার সূত্র ধরে বাঙালি সমাজে সম্প্রদায়গত বিভেদ, জাতিবৈর মনোভাব ও ধর্মবিদ্বেষ বিশেষ প্রশ্রয় লাভ করে। ফলে প্রধান দুটি সম্প্রদায় হিন্দু ও মুসলমানের সামাজিক সৌহার্দ বিনষ্ট ও মানসিক দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। এই দুই সম্প্রদায়ের পারস্পরিক জানা-বোঝার তেমন কোনো সুযোগ ছিল না। কিছু পরিমাণে সে ব্যবস্থা হতে পেরেছিল ব্রাহ্মসমাজের সৌজন্যে। ব্রাহ্মসমাজ ধর্ম-সমন্বয়, পরধর্মের প্রতি কৌতূহল ও শ্রদ্ধাবোধ এবং সম্প্রদায়-সম্প্রীতির বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছিল। এই ভাবনা থেকেই ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেন-প্রতিষ্ঠিত নববিধান ব্রাহ্মসমাজের পক্ষ থেকে একেশ্বরবাদী ধর্ম সম্পর্কে অন্বেষণ ও আলোকপাতের প্রয়াস গৃহীত হয়। ভাই গিরিশচন্দ্র সেন (১৮৩৪-১৯১০) ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের এই উদ্যোগের স্মরণীয় পথিকৃৎ ও প্রধান রূপকার। অনুবাদের মাধ্যমে ইসলামি শাস্ত্র সম্পর্কে ব্রাহ্ম বা হিন্দুর মনে ঔৎসুক্য ও মুসলমানের মনে প্রেরণা জাগানোর কৃতিত্ব তাঁরই প্রাপ্য।
গ্রন্থপ্রণেতা, ধর্মপ্রচারক, দেশানুরাগী, সত্যান্বেষী, জনহিতকামী, শিক্ষাব্রতী, সাময়িকপত্রসেবী—গিরিশচন্দ্র সেন নানা গুণবৈশিষ্ট্যে চিহ্নিত। এই মনীষীর প্রাতিস্বিক পরিচয় পরধর্ম চর্চায়—পবিত্র কোরআন শরিফের প্রথম বঙ্গানুবাদে এবং ইসলামি-শাস্ত্র ও মুসলিম ধর্মীয় মহাপুরুষদের জীবনচরিত রচনায়। এসব গ্রন্থ তিনি তরজমা করেন আরবি-ফারসি-উর্দু ভাষা থেকে। গোলশনে আগ্রার নামক মূল ফারসি গ্রন্থ থেকে অনূদিত তত্ত্বকুসুম সেই প্রয়াসেরই নিদর্শন।
কম দেখান