বঙ্কিম তাঁর সমকালের সমাজপ্রগতির ছবি আঁকতে গিয়ে ভাবের চেয়ে রূপকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। আর উপস্থাপনভঙ্গিতে ছিল কবিত্ব। বিশেষ করে নারীর রূপের মোহজাগানিয়া শক্তির প্রকাশে তাঁর সমকক্ষ আর কেউ নেই। নারীর রূপের মহিমার পাশাপাশি এঁকেছেন পুরুষের সৌর্ন্দতৃষ্ণা। নরনারীর প্রেম, নারীর রূপের মোহে আচ্ছন্ন পুরুষের করুণ পরিণতি, বিধবা-প্রসঙ্গ, পারিবারিক দ্ব›দ্ব-বিবাদ এবং সমকালীন...
আরো পড়ুন
বঙ্কিম তাঁর সমকালের সমাজপ্রগতির ছবি আঁকতে গিয়ে ভাবের চেয়ে রূপকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। আর উপস্থাপনভঙ্গিতে ছিল কবিত্ব। বিশেষ করে নারীর রূপের মোহজাগানিয়া শক্তির প্রকাশে তাঁর সমকক্ষ আর কেউ নেই। নারীর রূপের মহিমার পাশাপাশি এঁকেছেন পুরুষের সৌর্ন্দতৃষ্ণা। নরনারীর প্রেম, নারীর রূপের মোহে আচ্ছন্ন পুরুষের করুণ পরিণতি, বিধবা-প্রসঙ্গ, পারিবারিক দ্ব›দ্ব-বিবাদ এবং সমকালীন সামাজিকতার বিচারে তাঁর বিষবৃক্ষ কালোত্তীর্ণ উপন্যাস। শিল্পের বিচারে উপন্যাসটি খুবই উঁচুমাপের হলেও সামাজিক বিষয়াদি পরিবেশনে রক্ষণশীলতার দায় এড়াতে পারেনি। সূর্যমুখীর স্বামীভক্তিকে এত বেশি রঙ চড়িয়ে আঁকা হয়েছে যে, তা সাধারণ পাঠকের চোখে অবিশ্বাস্য বলে ঠেকে। আবার সূর্যমুখীর মুখ দিয়ে বিধবাবিবাহের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশের মধ্য দিয়ে লেখক বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর হিন্দুয়ানির প্রতিক্রিয়াশীলতাকেই তুলে ধরেছেন বলে অনেকের ধারণা। বিদ্যাসাগরের সমাজ-সংস্কারের মূল ধারায় বঙ্কিম প্রবেশ করতে পারেননি কেবল সনাতন ধর্মের কায়েমি স্বার্থের কাছে মনে মনে হার মেনেছিলেন বলে। তবে তিনি আধুনিক বাঙালির চিন্তা ও কল্পনা, উদ্যম ও উন্নত আশার পূর্ণ বিকাশভ‚মি। উনিশ শতকে ভারতে জ্ঞান ও বাণিজ্যের উৎকর্ষের সময় ব্যক্তিগত প্রতিভা ও শক্তিকে অবলম্বন করে সামনে এগোবার যে পথ তৈরি হচ্ছিল, তার বার্তাবাহক এই সমাজশিল্পী বঙ্কিমচন্দ্র। ভারতবাসীকে আধুনিকতার বারান্দায় হাজির করেছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩) ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। মনের শক্তি, চিন্তার স্পর্ধা, জাতীয়তাবোধ আর ধর্মাচারের প্রতি নিমগ্নতায় সেদিনের অগ্রগমনের ইতিহাস সৃষ্টিতে সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্রের যে অবদান, তা আজও উজ্জ্বল আলোর প্রভায় সুচিহ্নিত।
কম দেখান