কথাশিল্পী আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এমন পরিচয়ে তাঁকে আমি জানি চিলেকোঠার সেপাই উপন্যাসের মধ্য দিয়ে। পরে এই লেখককে নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে আমাকে ঋণী করেছেন আমার পরম শ্রদ্ধেয় দুশিক্ষক ড. অনীক মাহমুদ ও ড. সফিকুন্নবী সামাদী। প্রথমজন এ কাজের গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস নিয়ে যখন কাজ করছি...
আরো পড়ুন
কথাশিল্পী আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এমন পরিচয়ে তাঁকে আমি জানি চিলেকোঠার সেপাই উপন্যাসের মধ্য দিয়ে। পরে এই লেখককে নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে আমাকে ঋণী করেছেন আমার পরম শ্রদ্ধেয় দুশিক্ষক ড. অনীক মাহমুদ ও ড. সফিকুন্নবী সামাদী। প্রথমজন এ কাজের গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস নিয়ে যখন কাজ করছি তখন রসদ সংগ্রহে প্রায়ই ছুটে গেছি শ্রদ্ধাভাজন হাসান আজিজুল হকের কাছে। তাঁর সুবিশাল গ্রন্থশালা ঘেঁটে অনেক মূল্যবান পত্র-পত্রিকা যেমন তিনি দিয়েছেন তেমনি তার ফাঁকে ফাঁকে ইলিয়াস সম্পর্কে অনেক কথা বলেছেন; নিজের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন। তখনই জানতে পারি দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত ইলিয়াস কলকাতায় চিকিৎসাধীন। তখন লেখকের সঙ্গে আর যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। তাঁর মৃত্যুসংবাদও রাজশাহীতে বসে শুনেছি। শেষ অব্দি তাঁকে দর্শনের অপূর্ণ বাসনা আর পূর্ণ হয়নি। তা কোনোদিন হওয়ারও নয়। রাজশাহীর ‘দৈনিক বার্তা’; ‘আজকের কাগজ’, ‘সংবাদ’ এসব পত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সাহিত্যরুচি, তাঁর উপন্যাস নিয়ে নিবন্ধ লিখেছি। কোনোটা তার জীবদ্দশায়, কোনোটা মৃত্যুর পরে। শুধু লেখার জন্য লেখা নয়, ইলিয়াসচর্চা করতে এগিয়ে সাহিত্য সম্পর্কে যে বোধ আমার মনে জন্ম নিয়েছে, সে তাগিদ থেকেই আমি লিখছি। এ পর্যায়ে শুধু একজন কথাসাহিত্যিক হিসেবে ইলিয়াস-পাঠক নয় একজন ইতিহাসবোদ্ধা রাজনীতিক এবং সমাজতাত্ত্বিক হিসেবে শিল্পচর্চায় তাঁর প্রবণতাকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি।
গ্রন্থটির প্রকাশলগ্নে গবেষণা অংশের সঙ্গে ‘নিবিড় পাঠ’ নামে একটি অধ্যায় সংযুক্ত করে এতে নয়টি উল্লেখযোগ্য গল্প ও উপন্যাস দু’টির আলোচনা করেছি। শিক্ষার্থী ও সাধারণ পাঠকের সরল দৃষ্টি এবং তাৎক্ষণিকভাবে লেখকের ছুঁয়ে দেখার ব্যাপারটা এক্ষেত্রে বিবেচনায় এনেছি। তা ছাড়া অনেক জায়গায় পরিবর্ধন ও পরিমার্জনও করেছি। আমার সমগ্র কাজের প্রকাশলগ্নে অনেক শুভাকাক্সক্ষী এবং বিভাগের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের কথা মনে পড়ছে! বিশেষ করে শিক্ষাগুরু প্রফেসর চৌধুরী জুলফিকার মতিন, যিনি আগাগোড়াই দিয়েছেন এ কাজে অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা। তাঁর কাছে আমার ঋণ অপরিশোধ্য। বৎসরাধিক পূর্বে আমার এম.এ.-র ডিসার্টেশন পেপার হিসেবে এর কাজ শেষ হয়। এরপর সময়ের প্রতিকূলতা এবং প্রকাশকের অবিশ্বাস্য অনাস্থা থেকে নিভৃতে দিন গুজরান চলতে থাকে। এর মাঝে অনেকেই পাণ্ডুলিপি হাতে নেন, প্রশংসাবাদ ব্যক্ত করেন এবং প্রকাশিত হওয়া উচিত এই মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন, কিন্তু কার্যে পরিণত হয়নি। জুলুম করেও লাভ পাইনি। শেষাবধি আমার শিক্ষক সফিকুন্নবী সামাদী নিজে থেকেই এ কাজে আগ্রহী হয়েছেন, প্রকাশকের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। স্নেহের বন্ধনের বাইরে এমন একটা কাজে আমার নির্বাক চিত্তকে বিবেচনায় এনে আমাকে যে ঋণে তিনি আবদ্ধ করেছেন তা বলবার নয়। এটাই বলবো, তাঁর চেষ্টাতেই আমার পাণ্ডুলিপি জড়তামুক্ত হলো। গ্রন্থটির কয়েকটি অধ্যায় ইতিমধ্যে ‘আজকের কাগজ’, ‘বাংলার বাণী’ এবং পাক্ষিক ‘শৈলী’তে প্রকাশিত হয়েছে। এ গ্রন্থের প্রকাশলগ্নে উল্লিখিত পত্রিকার সম্পাদকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আমার মতো একজন পরিচয়হীন অখ্যাত ‘মফম্বল’ লেখকের পাণ্ডুলিপি হাতে নিয়ে জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশনের কমল কান্তি দাস ও মোর্শেদ আলম যে সাহসের পরিচয় দিয়েছেন একেবারে ধন্যবাদ জানিয়ে তার মূল্যায়ন হয় না।
কম দেখান