শুরুর আগে
পৃথিবীর মাঝেই আর এক পৃথিবী।
এদেশের মাঝেই আর এক দেশ।
নাম তার অচলায়তন।
রাজধানীর পথে চলতে চলতে হয়তো চোখে পড়েছে আপনার সেই উঁচু প্রাচীর। কোথাও তার উচ্চতা চৌদ্দ ফিট কোথাও বা বিশ ফিট। আর নিশ্চয় চোখে পড়েছে বিশাল সেই লৌহ কপাট, কালো কপালে যার সাদা অক্ষরের ইংরেজি ঘোষণা, ঢাকা সেন্ট্রাল জেল দেশের...
আরো পড়ুন
শুরুর আগে
পৃথিবীর মাঝেই আর এক পৃথিবী।
এদেশের মাঝেই আর এক দেশ।
নাম তার অচলায়তন।
রাজধানীর পথে চলতে চলতে হয়তো চোখে পড়েছে আপনার সেই উঁচু প্রাচীর। কোথাও তার উচ্চতা চৌদ্দ ফিট কোথাও বা বিশ ফিট। আর নিশ্চয় চোখে পড়েছে বিশাল সেই লৌহ কপাট, কালো কপালে যার সাদা অক্ষরের ইংরেজি ঘোষণা, ঢাকা সেন্ট্রাল জেল দেশের আর আর সব প্রশাসনিক বিভাগের মতোই এখানেও রাষ্ট্র ভাষা চালু হয়নি আজো। এ প্রাচীরের উপর চোখ পড়ে আপনি কি কখনো থমকে দাঁড়িয়েছেন? থমকে দাঁড়িয়ে শুনতে পেয়েছেন ব্যর্থ প্রতিবাদে গুমরে ওঠা কোনো কান্না? শুনতে পেয়েছেন ধুক ধুক কোনো প্রাণের স্পন্দন? থমকে দাঁড়িয়ে আপনার কি মনে হয়নি, পাষাণ দেয়ালের নিরন্ধ্র বুকেও কত কথার আকুতি?
হয়তো এ প্রাচীর, আড়াআড়ি পুরু পুরু লোহার পাত, মোটা মোটা শিক-সেই কঠিন নিগড়, এসব চোখেই পড়েনি আপনার। আপনি থমকে দাঁড়াননি। আপনি শোনেননি দেয়ালের কাহিনী। আপনি পাশ কাটিয়ে গেছেন।
কিন্তু আপনি পাশ কাটিয়ে গেলে অথবা চোখ বুজে থাকলেই কি এই লৌহ নিগড়ের অস্তিত্ব মিথ্যে হয়ে যায়? যায় না। কেননা এই রাজধানীর কেন্দ্রস্থলেই তার সদর্প অস্তিত্ব। একদিকে চকবাজার, দেওয়ান বাজার, অপরদিকে উর্দু রোড, পেছনে বক্সীবাজার-চতুর্দেয়ালে ঘেরা খুদে এই জগৎণ্টাই আমার অচলায়তন। এখানে যারা বাস করে তারাও মানুষ। কেউ কয়েদী, কিছু রাজবন্দী। জীবন এখানে স্থবির। নিঃশ্বাস এখানে যন্ত্রণা। এখানে অন্ধ দেয়ালে শূন্যতার আর্তনাদ। এখানে সভ্যতা মৃত। অসীমের যাত্রী মানুষ, মানব অভিযাত্রীর এ নাকি তার মধুরতম লগ্ন। কিন্তু অচলায়তনের দেশে সে তো শুধুই পরিহাস।
কম দেখান