সৃষ্টির শুরু থেকেই অঙ্ক নিয়ে মানুষের কৌতূহল রয়েছে। যখন থেকে মানুষ হিসাব করতে শুরু করল, তখন এই শাস্ত্রটির উপর নির্ভরতা আরও বেড়ে গেল। পথ চলতে চলতে প্রতিনিয়ত গণিত নানাভাবে বিস্তৃত হয়েছে। আজ বিজ্ঞানের এই উন্নতির পেছনে বিরাট ভূমিকা রয়েছে অঙ্কশাস্ত্রের। জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে অঙ্ককে ব্যবহার করতে হয় হাতিয়ার হিসেবে। অঙ্ক হলো...
আরো পড়ুন
সৃষ্টির শুরু থেকেই অঙ্ক নিয়ে মানুষের কৌতূহল রয়েছে। যখন থেকে মানুষ হিসাব করতে শুরু করল, তখন এই শাস্ত্রটির উপর নির্ভরতা আরও বেড়ে গেল। পথ চলতে চলতে প্রতিনিয়ত গণিত নানাভাবে বিস্তৃত হয়েছে। আজ বিজ্ঞানের এই উন্নতির পেছনে বিরাট ভূমিকা রয়েছে অঙ্কশাস্ত্রের। জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে অঙ্ককে ব্যবহার করতে হয় হাতিয়ার হিসেবে। অঙ্ক হলো বিজ্ঞানের ভাষা। এই ভাষা জানা থাকলেই বিজ্ঞান পড়া যায়, জানা যায়। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান, প্রকৌশল, মহাকাশ গবেষণা, সমুদ্রবিজ্ঞান কোথায় নেই গণিত! এই ভাষা জানা না থাকলে বিজ্ঞানের পথে হাঁটাই যাবে না।
শিক্ষাজীবনে অন্যান্য বিষয় থাকুক বা না থাকুক গণিত থাকতেই হবে। অন্তত গণিতের প্রাথমিক জ্ঞান সবারই থাকা চাই। শিক্ষার্থীদের অঙ্কভীতি দেখা যায়। তবে সবার ক্ষেত্রে তা সত্য নয়। কেউ কেউ গণিত বা অঙ্ককে ভালোও বাসে। গণিত নিয়ে দেশে দেশে নানা ধরনের ধাঁধা, খেলা প্রচলিত আছে। খেলা হলেও এগুলো অঙ্কের হিসাবকে বাদ দিয়ে নয়। অঙ্কের নিয়মনীতি পুরোপুরি মেনেই এই খেলা বা ধাঁধা খেলতে হয়। মস্তিষ্ক চালনার জন্য, বুদ্ধি বাড়ানোর জন্য নানা ধরনের গণিতের খেলা উদ্ভাবিত হয়েছে নানা দেশে, নানা অঞ্চলে। অঙ্ক নিয়ে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংস্কৃতি, প্রচলিত রীতিনীতি, প্রকৃতি, পরিবেশ, প্রাণীর ধর্ম প্রভৃতির অন্তর্নিহিত খেলা উঠে এসেছে। কোথায় গণিত রয়েছে, কীভাবে রয়েছে তা অঙ্কের মজার জগতে ধরা দিয়েছে।
ইয়াকভ পেরেলমানের লেখা মূল বইটির নাম ছিল অঙ্কের খেলা। এই বইয়ে অসাধারণ বুদ্ধিমত্তায় গণিতের নানা মজাদার প্রসঙ্গ উপস্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশের কিশোর-তরুণদের কথা ভেবে বইটির নতুন সংস্করণ সম্পাদনা করে প্রকাশ করা হলো। নতুন নামকরণ করা হলো অঙ্কের মজার জগৎ। মোট ১১টি অধ্যায়ে বইটি সাজানো হয়েছে।
খাবার টেবিলে বুদ্ধির খেলা, খেলা ও অঙ্ক, অঙ্ক ও এক সারি ধাঁধা, গুনতি, ঠকানো সংখ্যা, দানবীয় সংখ্যা, যন্ত্রপাতির সাহায্য ছাড়াও মাপা যায় কী করে? মাথা ঘামানো জ্যামিতি, বৃষ্টি ও তুষারের জ্যামিতি, গণিত ও মহাপ্লাবন এবং পাঁচমিশালি ধাঁধার মাধ্যমে বইটির বিষয় উপ¯’াপন করা হয়েছে। একটি বনের মাঝখানে একটি কাঠবিড়ালিকে চারদিকে প্রদক্ষিণ করা নিয়ে একটি ধাঁধা দিয়ে শুরু বইয়ের খেলা। এভাবে ১৩টি ঘটনা দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রথম অধ্যায়। কোনো কোনো খেলার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। গানিতিক টেবিল ব্যবহার করা হয়েছে কোথাও কোথাও। খেলার অংশ হিসেবে ধাঁধা দেওয়া হয়েছে; আবার সেসব ধাঁধার উত্তরও দেওয়া হয়েছে। খেলা ও অঙ্ক অধ্যায়ের ঘুঁটি ব্যবহার করে ধাঁধা সাজানো হয়েছে এবং রয়েছে চমৎকার সব ছবি।
তৃতীয় অধ্যায়ে আরেক সারি ধাঁধার নানা ব্যবহারিক অনুষঙ্গের মাধ্যমে খেলা উপস্থাপন করেছেন লেখক। দাঁতওয়ালা চাকা এর একটি উদাহরণ। গণিতের হিসাব না করেও এই ধাঁধা মেলানোর চেষ্টা করা যায়; তবে অঙ্কটা মাথার মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ঢুকে যাবে।
চতুর্থ অধ্যায়ে চিত্র ও টেবিল ব্যবহার করে গুনতির ধাঁধা দেওয়া হয়েছে। পঞ্চম অধ্যায়ে ঠকানো সংখ্যার খেলা রয়েছে। সংখ্যা নিয়ে খেলা রয়েছে পঞ্চম অধ্যায়ে। এই অধ্যায়ের ধাঁধায় গণিতের সংখ্যাতত্ত্ব ব্যবহার করেছেন লেখক। তবে এই গণিত একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ের। ষষ্ঠ অধ্যায়ে দানবীয় সংখ্যায় দেখানো হয়েছে গুণিতক ধারার হিসাব, যা একটি গাণিতিক সূত্র। তবে এই গাণিতিক সূত্র ব্যবহার না করেই ধারাটির হিসাব বোঝানো হয়েছে এই খেলায়। যেকোনো পাঠকই হিসাবটি বুঝতে পারবে। সপ্তম পরি”ছদের খেলায় রাখা হয় যন্ত্রপাতির সাহায্য ছাড়া পরিমাপের উপায়। অষ্টম অধ্যায়ে রয়েছে জ্যামিতি। নানা কৌতূহলোদ্দীপক চিত্রের সাহায্যে এই ধাঁধা উপস্থাপন করা হয়। মাথা খাটানোর জন্য এই জ্যামিতিক ধাঁধা সাজানো হয়েছে। সাধারণ পাঠক্রমের বাইরে গিয়ে খেলা খেলতে জ্যামিতিপ্রিয় পাঠক মাত্রেরই ভালো লাগবে। দশম অধ্যায়ে রয়েছে বৃষ্টি ও তুষার মাপার হিসাব। গণিত ও মহাপ্লাবন শিরোনামে দশম অধ্যায়ের ধাঁধা সাজানো হয়েছে। সবশেষ অধ্যায়ে রয়েছে পাঁচমিশালি ধাঁধা। এই অধ্যায়ের প্রথম ধাঁধার পাঁচটি শেকল রয়েছে যেগুলো জোড়া লাগানো নিয়ে ধাঁধা তৈরি করা হয়েছে। অঙ্ক না করেও এই ধাঁধার সমাধান করা হয়েছে সহজ হিসাব করে। সংখ্যার হিসাব, ভাগ অঙ্ক, কৌণিক হিসাব, জ্যামিতিক চিত্র প্রভৃতি এই অধ্যায়ের ধাঁধায় পাওয়া যাবে।
আমাদের প্রত্যাহিক জীবনযাপনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে অঙ্কের নানা হিসাব রয়েছে। চোখ-কান খোলা রেখে দেখলেই তা বোঝা যায়। সেই অঙ্কের খেলাটি যখন ধরা পড়ে তখনই আনন্দ পাওয়া যায়। ইয়াকভ পেরেলমান সেই খেলাটিই তুলে এনেছেন তার অঙ্কের খেলায়। গণিত, অঙ্ক, হিসাব যাই বলি না কেন সবকিছু খেলায় খেলায় উপলব্ধি করলে পাওয়া যায় প্রকৃত আনন্দ-সেখানেই ধাঁধার মজা-অঙ্কের মজা।
কম দেখান