দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্রের সর্বপ্রথম উপন্যাস। উপন্যাসটিতে অপরিণতির অনেক চিহ্ন থাকলেও বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে অনবদ্য ভ‚মিকা রাখে। উপন্যাসটিতে মোগল পাঠানের যুদ্ধবৃত্তান্ত অঙ্কিত হয়েছে। ঐতিহাসিক পুরুষ চরিত্রের মধ্যে মানসিংহ, কতলু খাঁ চরিত্র থাকলেও তা বিশেষ গভীরভাবে ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের সঙ্গে চিত্রিত হয়নি। ঐতিহাসিক পরিবেশনা বঙ্কিমের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল না। বর্ণিত যুগের বিশেষত্ব ফুটিয়ে তোলাতেও...
আরো পড়ুন
দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্রের সর্বপ্রথম উপন্যাস। উপন্যাসটিতে অপরিণতির অনেক চিহ্ন থাকলেও বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে অনবদ্য ভ‚মিকা রাখে। উপন্যাসটিতে মোগল পাঠানের যুদ্ধবৃত্তান্ত অঙ্কিত হয়েছে। ঐতিহাসিক পুরুষ চরিত্রের মধ্যে মানসিংহ, কতলু খাঁ চরিত্র থাকলেও তা বিশেষ গভীরভাবে ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের সঙ্গে চিত্রিত হয়নি। ঐতিহাসিক পরিবেশনা বঙ্কিমের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল না। বর্ণিত যুগের বিশেষত্ব ফুটিয়ে তোলাতেও তাঁর বিশেষ আগ্রহ দেখা যায় না। তবে ঐতিহাসিক বিপ্লব একজন সাধারণ দুর্গস্বামীর ভাগ্যের ওপর কেমন অতর্কিত বজ্রপাতের মতো এসে পড়ে তার চিত্র আমরা উপন্যাসটিতে পাই। বাংলা সাহিত্য যেখানে ছিল বর্ণনাধর্মী ও ধর্মনির্ভর সেখানে বঙ্কিম ইতিহাস ও রোমান্সকে আশ্রয় করেন। বঙ্কিমের চরিত্রেরা শিক্ষিত মধ্যবিত্তের প্রতিনিধি। সাধারণ জীবন থেকে চরিত্রগুলো গ্রহণ করা হয়নি। তিনি সাধারণত নগরজীবনকে তাঁর বিষয় করেননি। নগর জীবনাপেক্ষা শান্ত প্রকৃতি, উদ্বেল করোজ্জ্বল নদীবক্ষ, ফুল, গাছ, পাখি তাঁর কল্পনায় প্রভাব ফেলে। প্রার্থনা ও প্রাপ্তি মধ্যে বাসনা এবং চরিতার্থতার মধ্যে যে ব্যবধান, তা তাঁর কল্পনাকে বারবার স্পর্শ করে। প্রতিটি উপন্যাসের চরিত্রের বেদনা ও যন্ত্রণার উৎসে এই কল্পনা বিদ্যমান। প্রতাপের মৃত্যু, গোবিন্দলালের সন্ন্যাস, নবকুমারের আত্মবিসর্জন, সীতারামের সমাপ্তি এই সকল কিছুর মূলেই সেই সত্য ক্রিয়াশীল। তাঁর উপন্যাসের সকল চরিত্রের মূলে বিদ্যমান এক অনুশোচনাবোধ। নৈতিকতা, ধর্মবোধকে আঁকড়ে ধরে রোমান্স ও ইতিহাসকে আশ্রয় করেই তাঁর উপন্যাস গঠিত। তাঁর উপন্যাসের কোনো চরিত্রই ভাবাতিরেক দুষ্ট নয়। সেকারণে বঙ্কিমের উপন্যাস মানুষের কর্মময় দৈনিকের চিত্রাকঙ্কনে পরান্মুখ।
কম দেখান