দেবদাস বা দেবদাস মখার্জি বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে তৎকালীন ব্রাহ্মণ জমিদার বংশের একমাত্র সন্তান পারু বা পার্বতী এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। দুই পরিবার পাশাপাশি বাস করতো বাংলার তালসোনাপুর গ্রামে। যার কারণেই তাঁদের ভেতরে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ ও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। একজন অপরকে 'পারু' আর 'দেবদা' বলে ডাকে। স্কুলে পড়া থেকে শুরু...
আরো পড়ুন
দেবদাস বা দেবদাস মখার্জি বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে তৎকালীন ব্রাহ্মণ জমিদার বংশের একমাত্র সন্তান পারু বা পার্বতী এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। দুই পরিবার পাশাপাশি বাস করতো বাংলার তালসোনাপুর গ্রামে। যার কারণেই তাঁদের ভেতরে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ ও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। একজন অপরকে 'পারু' আর 'দেবদা' বলে ডাকে। স্কুলে পড়া থেকে শুরু করে পুকুরে মাছ ধরা পর্যন্ত প্রত্যেকটি কাজই তারা একসঙ্গে করতো। তাঁদের এই সাজানো প্রজাপতির জীবন থাকলো না বেশিদিন। দেবদাসকে পড়াশোনার জন্য পাঠানো হলো কলকাতায়। সেখান থেকে কয়েক বছর পর ছুটির সময় ফিরে আসে দেবদাস; আর ফিরে এসে দেখে তার পারু বদলে গেছে; পার্বতী স্বপ্ন দেখে দেবদাসকে নিয়ে।
সে তাঁদের ছোটবেলার বন্ধুত্ব আর কৈশোরের গোপন প্রেমকে বিবাহবন্ধনে পরিস্ফুটিত করতে চায়। দেবদাসের বংশ পরম্পরা অনুযায়ী পার্বতীর বাবা-মাকে বিবাহের প্রস্তাব দিতে হবে দেবদাসের বাড়িতে। পার্বতীর কথায় তার মা দেবদাসের মা হরিমতির কাছে প্রস্তাব নিয়ে যায়। কিন্তু পার্বতীর পরিবার অ-জমিদার হওয়াতে দেবদাসের পরিবার তাতে বিশেষ উৎসাহ দেখায় না। আর বহুকালের প্রথা অনুযায়ী পার্বতীর পরিবার থেকে 'পণ' গ্রহণের প্রথা থাকায় দেবদাসের মা তাঁদের পরিবারকে 'বেচা-কেনা ছোটঘর' মনে করে নিজে ও দেবদাসের বাবা নারায়ণ মুখার্জি কেও সেই যুক্তিতে সমর্থিত করেন; দেবদাস ও পারুর বিয়ের সম্পর্কে জড়ানোকে নাকোচ করেন। তাতে পার্বতীর পিতা নীলকণ্ঠ চক্রবর্তী অপমানিত বোধ করেন ও পার্বতীর জন্য দেবদাসের চেয়ে সম্ভ্রান্ত পরিবারে সাথে তাদের মেয়ে পার্বতীর বিবাহ ঠিক
করেন। কলকাতায় গিয়ে দেবদাসের চুনীলালের সাথে বন্ধুত্ব হয় ও তার মাধ্যমে সে চন্দ্রমুখী নামে এক বাঈজীর সাথে পরিচিত হয়। সে দেবদাসের প্রেমে পড়ে, যদিও দেবদাস তাকে ঘৃণা করতে থাকে। হতাশাগ্রস্ত দেবদাস অত্যধিক মদ্যপান শুরু করলে তার শরীর ক্রমশ ভেঙে পড়ে। চন্দ্রমুখী তার দেখভাল করতে থাকে। দেবদাস তার মনে প্রতিনিয়ত পার্বতী ও চন্দ্রমুখীর তুলনা করতে থাকে ও চন্দ্রমুখীকে সে পারুর কথা বলে। দুঃখ ভুলতে দেবদাস ক্রমশ মদ্যপানের মাত্রা বাড়াতে থাকে ও তাতে তার স্বাস্থ্যের চরম অবনতি ঘটে। চন্দ্রমুখী বুঝতে পারে যে দেবদাসের ভিতরের আসল
মানুষটির আজ পতন ঘটেছে। শীঘ্র আসন্ন মৃত্যুর কথা অনুভব করতে পেরে দেবদাস, পারুকে দেওয়া তার পূর্বের প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করতে হাতিপোতা গ্রামে পার্বতীর কাছে রওনা হয়। পার্বতীর বাড়ির সামনে পৌঁছে, এক অন্ধকার শীতের রাতে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে দেবদাসের মৃত্যু হয়। দেবদাসের মৃত্যুর খবর শুনে পার্বতী সেখানে ছুটে যায়, কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগেই, বাড়ির লোকজন তাকে বাড়ির চৌকাঠ অতিক্রম করতে দেয় না।
কম দেখান