আঠারো শতকের ত্রিশের দশকে ঢাকার ভাওয়ালে ব’সে পর্তুগিজ পাদ্রি মানোএল দা আসসুম্পসাউ রচনা করেছিলেন বাংলা ভাষার এক দ্বিভাষিক অভিধান ও খণ্ডিত ব্যাকরণ। সতেরো শ তেতাল্লিশ অব্দে রোমান বর্ণমালায় লিপিবদ্ধ ওই গ্রন্থ মুদ্রিত হয় লিসবন শহরে; এবং সূচিত হয় আধুনিক ভারতীয় ভাষাগুচ্ছের শুরুত্বপূর্ণতম ভাষা বাংলার বিশ্লেষণশাস্ত্র। তারপর অসংখ্য বাংলা ভাষাউৎসাহী ও...
আরো পড়ুন
আঠারো শতকের ত্রিশের দশকে ঢাকার ভাওয়ালে ব’সে পর্তুগিজ পাদ্রি মানোএল দা আসসুম্পসাউ রচনা করেছিলেন বাংলা ভাষার এক দ্বিভাষিক অভিধান ও খণ্ডিত ব্যাকরণ। সতেরো শ তেতাল্লিশ অব্দে রোমান বর্ণমালায় লিপিবদ্ধ ওই গ্রন্থ মুদ্রিত হয় লিসবন শহরে; এবং সূচিত হয় আধুনিক ভারতীয় ভাষাগুচ্ছের শুরুত্বপূর্ণতম ভাষা বাংলার বিশ্লেষণশাস্ত্র। তারপর অসংখ্য বাংলা ভাষাউৎসাহী ও বৈয়াকরণ ও ভাষাবিজ্ঞানী তিন শতক ধ’রে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ-বর্ণনা করেছেন বাংলা ভাষা: সংকলিত হয়েছে অভিধান, প্রণীত হয়েছে প্রথাগত ব্যাকরণ, উদঘাটিত হয়েছে তাঁর রহস্যরঞ্জিত ইতিহাস, আবিষ্কৃত হয়েছে তার ধ্বনি-শব্দ-বাক্যের অজস্র সূত্র; এবং গ’ড়ে উঠেছে তিন শতকে বিস্তৃত বাংলা ভাষাতত্ত্বের এক বহুস্তরিক বহমান ধারা-কখনো বিস্ময়কর অন্তর্দৃষ্টিখচিত, আভ্যন্তর সূত্রসন্ধানী, ব্যাখা ও বর্ণনামনস্ক, কখনো করুণ ব্যর্থ। ওই তিন শতকের বাংলা ভাষাতত্ত্বের পরিচয় আমাদের অনেকাংশেরই অজানা। এ উচ্চাভিলাষী ব্যাপক সংকলনে ধারণ করা হয়েছে তিন শতকের বাংলা বর্ণনা-ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রামাণ্য বিবরণ-আসসুম্পসাউ থেকে সাম্প্রতিক বাংলা ভাষাবিজ্ঞানীদের বিশ্লেষণ। সংকলিত হয়েছে বাংলা ভাষা বর্ণনা-ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের দশটি এলাকা-‘প্রথাগত বাংলা ব্যাকরণকাঠামো’, ‘বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব’, ‘বাংলা রূপতত্ত্ব’, ‘বাংলা বাক্যতত্ত্ব’, ‘বর্ণমালা প বানান সংস্কার’, ‘অভিধানসংকলন’, ‘ভাষা-পরিকল্পনা’, ‘পরিভাষা’, ‘উপভাষা’ ও বিবিধ বিষয়ক বিপুল পরিমাণ প্রবন্ধ ও গ্রন্থাংশ। এ- রচনাপুঞ্জের অধিকাংশই এতদিন লোকচক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে ছিল বিভিন্ন গবেষণাপত্রিকার ধূসর পৃষ্ঠায়, দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থের অভ্যন্তরে; কিন্তু করাল কাল হরণ করতে পারেনি ওই সব বিশ্লেষণ-ব্যাখ্যা-বর্ণনার আয়ু ও উজ্জ্বলতা। বাংলা ভাষা-উৎসাহীদের এ সংকলন অশেষ পরিতৃপ্তি দিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও দেবে ব’লেই আমাদের বিশ্বাস।
কম দেখান