আহমদ ছফার জীবনযাপন ও কর্মসাধনা দুটোই দ্যুতিময় হয়ে আছে ব্যতিক্রমের আলোছায়ায়। চিরকুমার এই মানুষটি প্রথাগতভাবে কোনো ঘরসংসার করেননি। আর সে-কারণেই তাঁর সংসারের পরিধি প্রসারিত হয়েছে বহুদূর পর্যন্ত। ঢাকাই শাড়ী পরে কোনো রমণী তাঁর ঘরে সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বালায়নি ঠিকই, কিন্তু তিনি 'মরেছেন হাজার মরণে'- সিক্ত হয়েছেন বহু নারীর ভালোবাসায়। কার্পণ্য করেননি সেই...
আরো পড়ুন
আহমদ ছফার জীবনযাপন ও কর্মসাধনা দুটোই দ্যুতিময় হয়ে আছে ব্যতিক্রমের আলোছায়ায়। চিরকুমার এই মানুষটি প্রথাগতভাবে কোনো ঘরসংসার করেননি। আর সে-কারণেই তাঁর সংসারের পরিধি প্রসারিত হয়েছে বহুদূর পর্যন্ত। ঢাকাই শাড়ী পরে কোনো রমণী তাঁর ঘরে সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বালায়নি ঠিকই, কিন্তু তিনি 'মরেছেন হাজার মরণে'- সিক্ত হয়েছেন বহু নারীর ভালোবাসায়। কার্পণ্য করেননি সেই ভালোবাসার প্রতিদান দিতেও। সংসার না থাকলে সন্তানও থাকবার কথা নয়। কিন্তু আত্মিকভাবে তিনি পিতা হয়েছেন অনেকেরই হয়েছেন সখা এবং স্বজন। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত জমিজমা বিক্রি করে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন পড়াশুনা করতে। কিন্তু পড়াশুনার চেয়ে আপ্যায়নেই তা ব্যয় হয়েছে বেশি। তবে পড়াশুনা তিনি ঠিকই করেছিলেন, আর তা করেছিলেন একেবারে নিজের মতো করে। তাই তার দীপ্তি এবং তীক্ষ্ণতা, সারলা এবং গভীরতা: সবই হয়ে উঠেছিল অনন্য- অনুপম। ইতিহাসের উত্থান-পতন, নৃতত্ত্বের নাড়ী-নক্ষত্র, রেনেসাঁর মর্মবাণী, রাজনীতির ভালো-মন্দ, শিল্পের রঙ-রূপ, সাহিত্যের দোষ-গুণ, অর্থনীতির চড়াই-উত্তাই, সমাজের সম্মুখগতি এবং পেছনমুখিতা, মনোলোকের আলো-আঁধার- সবকিছুকেই তিনি তাঁর ব্যাপক অধ্যয়ন, সপ্রতিভ চিন্তা-চেতনা আর মণীষার চৌম্বকীয় শক্তি দিয়ে নিপুণভাবে শনাক্ত ও বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারতেন। বাংলাদেশ নামক নবীন রাষ্ট্রটিকে সর্বাঙ্গসুন্দর করে তোলার কর্মময় স্বপ্ন তিনি লালন করতেন বুকের গভীরে। নানা ধরনের উঠতেন মেতে কর্মপরিকল্পনায়। সর্বত্রই বয়ে বেড়াতেন মানবতার উদার আদর্শ। এই গ্রন্থের লেখক খুব কাছে থেকে দেখবার সুযোগ পেয়েছেন তাঁকে। দীর্ঘ দিবস-রজনী পথ হেঁটেছেন তাঁরা একসাথে। পরস্পরের সুখেদুখে বাড়িয়েছেন সংবেদনার হাত, বিনিময় করেছেন জীবনের অভিজ্ঞতা আর হৃদয়ের আনন্দ-বেদনা। তবে শুধু মানুষটাকেই জানেননি তিনি, সমান আগ্রহ আর আন্তরিকতায় জেনেছেন তাঁর সমুদয় সাহিত্য এবং সৃষ্টিকর্মকেও। সেই দেখার, সেই জানার এবং অন্তরঙ্গ উপলব্ধির এ-এক হৃদয়-সংবেদী গ্রন্থ
কম দেখান